সাহিত্যের আলোকে কোরিয়া ও বাংলাদেশ: সমাজ, সংস্কৃতি, সম্পর্ক ও উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ শীর্ষক আলোচনা
- Dec 19, 2023
- [post-views]
সাহিত্যের আলোকে কোরিয়া ও বাংলাদেশ: সমাজ, সংস্কৃতি, সম্পর্ক ও উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় নেত্রকোণার বানপ্রস্থে। ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ তারিখ সোমবার বিকাল চারটায় বাংলাদেশ এবং কোরিয়ার সাহিত্য সম্পর্কিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম কবীর স্যার। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, প্রথিতযশা চিন্তাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, সাহিত্য গবেষক, নেত্রকোণা সরকারি মহিলা কলেজের মাননীয় অধ্যক্ষ বিধান মিত্র। সাহিত্যের আলোকে কোরিয়া ও বাংলাদেশ: সমাজ, সংস্কৃতি, সম্পর্ক ও উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন কবি, গবেষক, প্রাবন্ধিক, নেত্রকোণা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক অধ্যাপক সরোজ মোস্তফা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি ও প্রাবন্ধিক শাহেদ কায়েস, কবি মামুন খান ও শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোণার ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব সাফি উল্লাহ্। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন উজান প্রকাশনীর কর্ণধার, জিটিভির বার্তা সম্পাদক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও কবি ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ এবং লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মতীন্দ্র সরকার। উপস্থিত ছিলেন শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ হারন-অর-রশিদসহ নেত্রকোণার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সম্মাননীয় ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ ইমরান।
সঞ্চালকের সুমধুর সঞ্চালনা যেমন উপস্থিত শ্রোতাদের আনন্দ দিয়েছে তেমনি অনুষ্ঠানকে করেছে মাধুর্যমন্ডিত। বাংলাদেশের ইতিহাসে যেমন দেশ ভাগের নির্মমতা রয়েছে তেমনি কোরিয়ার ইতিহাসেও রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়ায় ভাগ হয়ে যাবার করুণতা। কোরিয়ার সংস্কৃতি ও বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যে নিবিড় আত্মীয়তা রয়েছে বলে কবি, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক সরোজ মোস্তাফা তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ করেন। সাহিত্য সাধারণ মানুষকে কথা বলার ক্ষেত্র তৈরি করে দেয় বলে মনে করেন শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাফি উল্লাহ্। তিনি তাঁর আলোচনায় উত্তর কোরিয়া থেকে ‘বান্দি’ ছদ্ম নামী একজন লেখকের পাচার হয়ে আসা প্রথম কোরিয়ান ভাষার পাণ্ডুলিপি থেকে প্রকাশিত ইংরেজি অনুবাদ ‘অ্যাকিউজেশন’র বাংলা অনুবাদ “ফরিয়াদ”র গল্প নিয়ে আলোকপাত করেন। বাংলাদেশের কবিতা সাহিত্যের সাথে কোরিয়ার কবিদের কবিতা ভাবনার বিষয়েও একটা ব্যাপক বৈষয়িক মিল রয়েছে উল্লেখ করে কোরিয়া কবিতার কয়েকটি উদ্ধৃতি তুলে ধরেন তিনি।
সাহিত্যের আলোকে কোরিয়া ও বাংলাদেশ: সমাজ, সংস্কৃতি, সম্পর্ক ও উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ শীর্ষক আলোচনানুষ্ঠানটি মূলত দক্ষিণ কোরিয়া সাহিত্য নিয়ে বলে সবিস্তারে আলোকপাত করেন কবি ও প্রাবন্ধিক শাহেদ কায়েস। কর্মসূত্রে তিনি দীর্ঘ চারবছর দক্ষিণ কোরিয়ায় ছিলেন। ফলে খুব কাছ থেকে জেনেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে। তিনি বলেন, কোরিয়া দীর্ঘসময় জাপানের কলোনাইজড ছিল। আমাদের দেশও একসময় বৃটিশদের কলোনাইজড ছিল। এদিক থেকে কোরিয়ার সাথে আমাদের একটা মিল রয়েছে। কোরিয়ার অর্থনৈতিক ও সামগ্রিক উন্নয়ন পরিবেশ উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ততা রেখেই সাধিত হয়। সংস্কৃতি এবং পরিবেশের সাথে মেলবন্ধন রেখে যে উন্নয়ন সাধন হয় সে উন্নয়ন অনেক বেশি টেকসই হয়।
প্রাবন্ধিক ও গবেষক শিক্ষক অধ্যক্ষ বিধান মিত্র বলেন, আধুনিক গদ্য সাহিত্যে এগিয়ে গেছে আমাদের দেশ। কোরিয়া প্রথমে চীন দ্বারা পরে জাপান দ্বারা শাসিত একটি দেশ। নারী এবং বৃদ্ধদের প্রতি আমাদের দেশের নাগরিকদের যে দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে একই দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে পাই কোরিয়ার ক্ষেত্রেও। কোরিয়ার কবিতার প্রধান বৈশিষ্ঠ্য হচ্ছে সহজবোধ্যতা।
বরেণ্য শিক্ষক ও প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক অধ্যাপক যতীন সরকার তাঁর আলোচনায় কোরিয়ার কবিদের বিভিন্ন কবিতার উদ্ধৃতি তুলে ধরেন। যারা জিজ্ঞেস করছো ঈশ্বর কি/তারা বোকা/ তার বদলে জীবন কি তা জিজ্ঞেস কর/ যেখানে লেবুর বাগানে ফুল ধরে/ সে সুন্দর, সে বন্দর খোঁজ/ ঐ বন্দরে পানশালা কোথায় তা জিজ্ঞেস কর/ জিজ্ঞেস কর পানখারুদের কথা/ জিজ্ঞেস কর লেবু গাছের কথা/ যতক্ষণ না জিজ্ঞেস করার মতো আর কিছু থাকবে/ ততক্ষণ জিজ্ঞেস কর আর জিজ্ঞেস কর। জিজ্ঞেস শব্দিটিকে বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, জানার ইচ্ছা প্রবল হোলেই আমরা জানতে পারবো। মূলত ইংরেজি ভাষা হয়ে কোরিয়ার সাহিত্য আমাদের কাছে আসছে এটার একটা বিপরীত দিক আছে। এক্ষেত্রে সাহিত্যের আসল উদ্দেশ্য হারিয়ে যায়। তাই মূল ভাষা থেকে অনুবাদ করলে সাহিত্যের মূলভাব বজায় থাকে।
সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম কবীর স্যার আলোচনায় উপস্থিত আলোচকদের কোরিয়ার সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পর্কিত আলোচনার প্রশংসা করেন। আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার যে জাগরণ তা কেবলমাত্র এশিয়ান হিসেবে নয় বরং বিশ্বনাগরিক হিসেবেও কোরিয়াকে আমাদের আগ্রহবিন্দুতে পরিণত করেছে। কোরিয়ার জাপানি ঔপনিবেশ ও বাংলায় বৃটিশ ঔপনিবেশের একটা ঐতিহাসিক মিল রয়েছে। এ দুটি ঐতিহাসিক বাস্তবতায় নিপীড়িত মানুষের দীর্ঘশ্বাসের ঐক্য দেখা যায়। কোরিয়ার হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা হলো ১৯৪৫ সালে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ভাগ হয়ে যায়। তেমনি ১৯৪৭ সালে বাংলা ভাগ হয়ে যায় বৃটিশদের কারণে। কোরিয়ার ইতিহাসে চীনের ঔপনিবেশিক শাসনের ঘটনাও রয়েছে। একসময় কোরিয়ার সাহিত্য রচনা হতো চীনা হরফে। আমাদের বাংলাকে যেমন গ্রাস করতে চেয়েছিল উর্দুভাষা।
বক্তব্য শেষে সভাপতি মহোদয় সাহিত্যের আলোকে কোরিয়া ও বাংলাদেশ: সমাজ, সংস্কৃতি, সম্পর্ক ও উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ শীর্ষক আলোচনানুষ্ঠান সমাপ্ত ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে উজান প্রকাশনী। কৃতজ্ঞতায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোণা।
কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে-
(এনামুল হক)
জনসংযোগ কর্মকর্তা
শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোণা
ফোন: 01975-805368